ফিলিস্তিনের সঙ্গে আরব দেশগুলোর সম্পর্ক দীর্ঘ ইতিহাস ও জটিল ঘটনাবলীর সমন্বয়ে গঠিত। প্রথম দিকে, আরব রাষ্ট্রগুলো ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে একতাবদ্ধ ছিল, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে এই সম্পর্কের গতিপথ পরিবর্তিত হয়েছে।
১৯৪৮ সালের পরবর্তী পরিস্থিতি: ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর বিপুল সংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী হয়ে আরব দেশগুলোতে আশ্রয় নেন। জর্ডান, লেবানন, মিশর প্রভৃতি দেশে তাদের বসবাস শুরু হয়। তবে, এই শরণার্থীদের নিয়ে আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক নীতিতে বিভিন্নতা দেখা দেয়।
জর্ডান ও লেবাননে সংঘাত: জর্ডানে, ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে রাজতন্ত্রের সংঘর্ষ (১৯৭০) এবং লেবাননের গৃহযুদ্ধের সময় (১৯৭৫-১৯৯০) ফিলিস্তিনিদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই সংঘর্ষগুলোতে ফিলিস্তিনিরা জড়িত থাকায় তাদের সঙ্গে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক জটিলতায় পড়ে।
মিশরের ভূমিকা: মিশর ফিলিস্তিনিদের সমর্থন প্রদান করলেও, গাজা উপত্যকায় হামাসের উত্থানের পর মিশরের নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়ে। ফিলিস্তিনিদের নিয়ে মিশরের নীতিতে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন দেখা যায়।
ইউএই, বাহরাইন ও সুদানের সম্পর্ক স্থাপন: ২০২০ সালে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও সুদান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে। এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে, কারণ এটি তাদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশা ক্ষুণ্ণ করে।
সৌদি আরবের অবস্থান: সৌদি আরব ফিলিস্তিনিদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছে, তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে, তবে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে কিছু শর্ত আরোপ করে।
সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আরব দেশগুলোর মধ্যে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমর্থনের মাত্রা কমেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন, ইরানের প্রভাব ও অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক কারণে ফিলিস্তিনিদের সমর্থন কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে, জনগণের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতি অব্যাহত রয়েছে।
সার্বিকভাবে, ফিলিস্তিন ও আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক সময়ের সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক, নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সমন্বয়ে এই সম্পর্কের গতিপথ নির্ধারিত হয়েছে।